Today November 1, 2025, 04:21 AM

সরকারের বি রু দ্ধে সবাই, ♦ জুলাই জাতীয় সনদে অ নৈ ক্য ♦ সংসদ নির্বাচন নিয়েই শ ঙ্কা

admin
Published November 1, 2025, 04:21 AM
সরকারের বি রু দ্ধে সবাই, ♦ জুলাই জাতীয় সনদে অ নৈ ক্য ♦ সংসদ নির্বাচন নিয়েই শ ঙ্কা

Manual2 Ad Code

সরকারের বি রু দ্ধে সবাই,
♦ জুলাই জাতীয় সনদে অ নৈ ক্য ♦ সংসদ নির্বাচন নিয়েই শ ঙ্কা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

 

স্বৈরাচারবিরোধী জুলাই বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছিল। সরকারের সব কর্মকাণ্ডের প্রতি আকুণ্ঠ সমর্থনও জানিয়েছিল। সংস্কার কমিশন গঠন এবং ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমকেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিল দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা ছিল বর্তমান সরকার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে সসম্মানে বিদায় নেবে। কিন্তু মাত্র ১৫ মাসের মাথায় প্রায় সব রাজনৈতিক দল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছে। ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে এ অভিযোগ এনেছে দলগুলো। এ অবস্থায় সরকার প্রতিশ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা এখন ঘোলাটে। প্রায় সব দল এখন সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। গণভোট নির্বাচনের আগে করার কোনো সুযোগ এখন আর নেই। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সময়ক্ষেপণ না করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেরি হলে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) জনগণের আস্থা হারাবে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর গণভোটের আয়োজন করতে হবে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমানে দেশ গভীর সংকটে রয়েছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। ভবিষ্যতে যে সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে, সেই সরকার যদি প্রতারক হয়, তাহলে আর কী করার আছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। দেশের বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় হলো, দ্রুত সময়ে নির্বাচন আয়োজন করা।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ২৮ অক্টোবর গণমাধ্যমে বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে নোট অব ডিসেন্ট বলে কোনো বিষয় থাকবে না, সংবিধান সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন যে বিষয়ে একমত হয়েছে, তা গণভোটে যাবে এবং জনগণ রায় দেবে। সেই বিষয়গুলো সংবিধানে পরিবর্তন হবে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ দুটো নির্বাচনের ঝুঁকি নেওয়ার অবস্থায় নেই। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সমর্থন দিয়েছি নির্দিষ্ট বিষয়ে। তবে তারা কোনো নির্বাহী আদেশ দিতে পারে না। সেই সমর্থন আমরা তাদের দিইনি।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমাদের ইতিহাসের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বারবার আমরা স্বৈরাচারকে সরাই, আবার আমাদের মধ্য থেকেই স্বৈরাচার জন্ম হয়। তাই ঐতিহাসিকভাবে আমাদের প্রতিনিয়ত লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। গণ অভ্যুত্থানের পরে আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের দেশে নতুন রাজনীতির উত্থান হবে। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, জুলাই সনদের নামে এখন রাজনীতিতে বৈষম্য ও বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ছোট-বড় সব দলের প্রার্থীরা এখন প্রচার ও গণসংযোগে ব্যস্ত। তবে জুলাই সনদ নিয়ে বিভাজন থাকলে নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে না, বাধাগ্রস্ত হবে।

Manual8 Ad Code

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে এনেছিল নতুন আশাবাদ। ফ্যাসিবাদ পতনের সেই আন্দোলন জন্ম দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই রাজনৈতিক ঐক্য যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুুতার পুরোনো বৃত্ত প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এর চূড়ান্ত প্রস্তাব ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতে সনদের একাধিক প্রস্তাবে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলেও কমিশনের বাস্তবায়নের সুপারিশে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সনদের চূড়ান্ত সংস্করণে তা অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় একে ‘রাজনৈতিক প্রতারণা’ হিসেবে দেখছে বিএনপি। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দিলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে। বিএনপি চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী চায় নভেম্বরে আলাদা গণভোট আয়োজন করা হোক। এনসিপি সময় নির্দিষ্ট না করলেও বলছে, জাতীয় ভোটের আগে গণভোট সম্পন্ন করতে হবে। এই অবস্থানগত পার্থক্যই এখন সোশ্যাল মিডিয়ার ‘হ্যাঁ-না’ প্রচারণায় প্রতিফলিত হচ্ছে। জামায়াত ও এনসিপির নেতা-কর্মীরা ‘হ্যাঁ’ লিখে পোস্ট দিচ্ছেন, আর বিএনপির অনেকেই ‘না’ লিখে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছেন। কমিশনের জমা দেওয়া সুপারিশকেও ইতিবাচকভাবে দেখছে জামায়াতে ইসলামী। তবে, জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের দাবিতে সোচ্চার দলটি। সমমনা আটটি রাজনৈতিক দল নিয়ে মাঠে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে বিপরীতমুখী অবস্থানই জুলাই সনদকে ঘিরে ঐকমত্যের বদলে রাজনৈতিক দলগুলোতে অনৈক্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই বিতর্ক ঘিরে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অপেক্ষায় পুরো দেশ। ইতোমধ্যে নানামুখী প্রস্তুতিও শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোও নেমেছে ভোটের মাঠে। দীর্ঘদিন ভোটাধিকারবঞ্চিত সাধারণ মানুষও নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। তবে সব পক্ষের প্রস্তুতি থাকার পরও বিভিন্ন ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধে নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা যেন কাটছেই না। এর সঙ্গে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নানা ‘উসকানি ও ষড়যন্ত্র’। সবশেষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও নির্বাচন নিয়ে চ্যালেঞ্জ ও ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণ আসতে পারে। এতে জনমনে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে। সবমিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দলগুলোর অবস্থান ও ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা এখন স্পষ্ট। নানা ইস্যুতে মাঠে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলই এখন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, এর সঠিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন সম্পর্কে একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যায়।

Manual7 Ad Code

এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গণভোট ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতের কথা বলছে। আমরা এটাকে হুমকি হিসেবে দেখছি না। যেটা সবচেয়ে উত্তম, প্রধান উপদেষ্টা সেটাই করবেন। যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, নির্বাচন ১৫ ফেব্রুয়ারির আগেই হবে।

Manual6 Ad Code

বিডি প্রতিদিন

Manual1 Ad Code