সিলেট [english_date], [bangla_date], [hijri_date]

জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আসা নিয়ে ধোঁয়াশা

প্রকাশিত November 5, 2025, 01:55 PM
জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আসা নিয়ে ধোঁয়াশা

Spread the love

ইসলামি বক্তা জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আসার বিষয়টি নিয়ে একপ্রকার ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তার আগমন বা ইভেন্ট আয়োজনের অনুমতি চেয়ে কোন আবেদনই এখনো পায়নি তারা। যদিও অনুমতি নিয়েই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার দাবি আয়োজক প্রতিষ্ঠানের।

গত কয়েকদিন ধরেই প্রচারণা চলছে যে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক আয়োজনে অংশ নিতে আগামী ২৮শে নভেম্বর বাংলাদেশে আসবেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসলামি বক্তা জাকির নায়েক।

বিশেষ করে জাকির নায়েক ঢাকায় এলে তাকে যেন গ্রেপ্তার করে দিল্লির হাতে তুলে দেয়া হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের এমন বক্তব্যের পর এই আলোচনা বাড়তি মাত্রা পায়।

যদিও তার ঢাকায় আসার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো স্পষ্ট বক্তব্য আসছিল না।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বরাত দিয়ে কয়েকটি স্থানীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানামুখি ব্যস্ততার কারণে জাকির নায়েককে এখনই বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হবে না।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ওই বৈঠকে জাকির নায়েকের আসার বিষয়টি আলোচনায় আসলেও, অনুমতি দেয়া বা না দেয়ার প্রসঙ্গে সেখানে কিছু বলা হয়নি।

কোর কমিটিতে থাকা উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, পত্রপত্রিকার লেখালেখি থেকে তারা জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আসার বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন। কিন্তু এ ধরনের কোনো আবেদন তারা পাননি।

তবে সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনের কারণে মঙ্গলবারের কোর কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন এই সময়ে তার এই সফরের অনুমতি না দেওয়ায় ভালো হবে বলে মনে করছে পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেওয়া হবে বলে আশা করছেন।

ওই কর্মকর্তার দাবি, মি. নায়েকের বাংলাদেশে আসা বা কোনো ইভেন্টে অংশ নেয়ার বিষয়ে কোনো চিঠিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো পায়নি।

এদিকে জাকির নায়েককে বাংলাদেশে আনতে যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে তারা বলছে, সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই সব আয়োজন শেষ করেছেন তারা।

মি. নায়েককে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হবে না এমন কোনো বার্তাও সরকারের পক্ষ থেকে পাননি বলেও বিবিসি বাংলাকে জানান আয়োজকরা।

অনুমতি প্রসঙ্গে যা জানা যাচ্ছে

জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আসার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এমনকি তার বাংলাদেশে আসার খবরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও মন্তব্য করা হয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বরাত দিয়ে স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে জানানো হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাকির নায়েককে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হবে না।

যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, জাকির নায়েকের বাংলাদেশের আসা বা তাকে নিয়ে কোনো ইভেন্ট আয়োজনের অনুমতি এখনো দেয়া হয়নি।

এমনকি এ সম্পর্কিত কোন আবেদনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখনো কেউ করেনি বলেও দাবি মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার।

তিনি বলছেন, “বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোন কমিটির বৈঠকে উঠেছিল, তবে অনেক বেশি আলোচনা হয়নি। এটুকুই জানানো হয়েছে যে, তার আসার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো আবেদনই এখনো কেউ করে নি।”

আয়োজকরা কি বলছেন

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইসলামি বক্তা জাকির নায়েককে বাংলাদেশে আনার বিষয়ে কাজ করছে একটি বেসরকারি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান।

তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৮শে ও ২৯শে নভেম্বর দুই দিনের জন্য তাকে ঢাকায় আনার সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরেও তার যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

তাদের দাবি, সরকারের কাছ থেকে অনুমতি পাওয়ার পরই মি. নায়েকের আগমন উপলক্ষ্যে নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তারা। ইতোমধ্যে এই ইভেন্টের সিংহভাগ প্রস্তুতিও শেষ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা শাহাদাত হাওলাদার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ডক্টর জাকির নায়েককে ঢাকায় আসার অনুমতি দেয়া হবে না সরকারের এমন কোনো সিদ্ধান্ত বা চিঠি এখনও তারা পাননি।

তিনি বলছেন, “পারমিশন নিয়েই তো আমি এটা নিয়ে কাজ করেছি। একটা দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি, আমার অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছি, এটা তো একটা মেগা ইভেন্ট।”

“দুই একটি গণমাধ্যমে তাকে আসার অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি দেখেছি। তবে এটা আদৌ সত্য তথ্য কিনা আমি এটা জানিনা। এমন কিছু হলে তারা তো আমাদেরকে জানাতো,” বলেন তিনি।

ভারতের কেন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে

জাকির নায়েকের বাংলাদেশে আগমনে খবরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশটিতে মামলার আসামি হওয়ায় তাকে গ্রেফতার করে ভারতের কাছে তুলে দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয় দেশটির পক্ষ থেকে।

গত ৩০শে অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়শোয়াল এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একজন পলাতক আসামি হওয়ায় জাকির নায়েক যে দেশেই যাবেন ওই দেশেরই উচিৎ তাকে গ্রেফতার করে ভারতের হাতে তুলে দেয়া।

মূলত ভারতের সন্ত্রাস দমন আইনের একাধিক মামলার আসামি জাকির নায়েক। এছাড়া তার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা – ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন বা ‘আই আর এফ’কেও নিষিদ্ধ করেছে ভারত।

এমনকি ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান বেকারির হামলার পরেই ভারতে অভিযোগ ওঠে যে মি. নায়েকের পিস টিভি সন্ত্রাসের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। তখন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মহারাষ্ট্র সরকার পৃথকভাবে মি. নায়েকের সংস্থাগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করে।

যদিও বিদেশ থেকে ‘স্কাইপে’র মাধ্যমে এক সংবাদ সম্মেলনে জাকির নায়েক দাবি করেছিলেন যে তাঁর ভাষণগুলির কোথাও তিনি সন্ত্রাসবাদের পক্ষে প্রচার চালান নি।

২০১৬ সালে ভারত ছেড়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান মি. নায়েক। এরপর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।

Spread the love

Leave a Reply Cancel reply