সিলেট [english_date], [bangla_date], [hijri_date]

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

admin
প্রকাশিত November 2, 2025, 04:31 PM
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন


সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির মাধ্যমেই আমরা দারিদ্র বিমোচন করতে পারবো বর্ণাঢ্য আয়োজনে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে।

রবিবার দিবসটি জাঁকজমক ভাবে উদযাপন করা হয়।

জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী প্রচার করা সহ জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও সাদা পায়রা উড্ডয়ন, কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ ও বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।

১৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সিকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: আলিমুল ইসলামের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি সমগ্র ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে সিকৃবি কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে “চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান উত্তর বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়নে কৃষিশিক্ষা ও গবেষণায় করনীয়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি-২০২৫ এর সভাপতি ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার এর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান পৃষ্ঠকপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিকৃবি’র ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: আলিমুল ইসলাম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এম সারওয়ারউদ্দিন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ নিজাম উদ্দিন, সিকৃবি ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী।

প্রধান পৃষ্ঠকপোষকের বক্তব্যে সিকৃবি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো: আলিমুল ইসলাম বলেন, জ্ঞান, মেধা ও মননের বিকাশে অনন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের দূরদর্শী পদক্ষেপে সিলেট অঞ্চলের কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নের লক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমান এর একক প্রচেষ্টায় এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি জাতিকে উপহার দিতে চাই। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি ও টেকসই উন্নয়নের প্রধান চাবিকাঠি হলো কৃষির সার্বিক উন্নয়ন। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমেই এই দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হতে পারে- এ বিশ্বাস থেকেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আধুনিক শিক্ষা ও গবেষণার কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতার বিকাশে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে একে সত্যিকার অর্থে জ্ঞানতীর্থে পরিণত করেছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এম সারওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষেই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পথচলা। কৃষিকে টেকসই ও লাভজনক করতে হলে আমাদের অবশ্যই আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে বীজ নির্বাচন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত এ আই প্রযুক্তির ব্যবহার উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, খরচ কমাতে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেই হবে না; প্রযুক্তি উৎপাদন, পরিচর্যা ও বিতরণ হলো গবেষক ও বিজ্ঞানীদের দায়িত্ব, আর সেগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা যদি গবেষণা, প্রযুক্তি এবং নীতিনির্ধারণ এই তিনটি ক্ষেত্রকে একসাথে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হবে। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষির মাধ্যমেই আমরা দারিদ্র বিমোচন করতে পারব, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব, এবং একটি আত্মনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুবিপ্রবির ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রযাত্রায় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ অপরিহার্য। আমাদের ঐতিহ্যবাহী সনাতন কৃষিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে যুগোপযোগী রূপ দিতে হবে। কৃষিতে প্রযুক্তি, অটোমেশন ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকের আয় নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে যাতে ফসলের উৎপাদন ‍বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ নিয়ন্ত্রণে টেকসই সমাধান উদ্ভাবন করা যায়। একই সঙ্গে চা ও চামড়া শিল্প যা আমাদের ঐতিহ্য ও রপ্তানি আয়ের বড় উৎস, তাকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল ও নীতি সহায়তা দিয়ে এই দুই খাতকে নতুন করে প্রাণবন্ত করা সম্ভব। কৃষি ক্ষেত্রে বেসিক ও অ্যাপ্লাইড গবেষণার মাধ্যমে নতুন জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু-সহনশীল ফসল ও পশুসম্পদ উন্নয়নে আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া, “ফুড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশন”-এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক শিল্পে রূপান্তর করতে হবে। কৃষি পণ্য প্রসেসিং সেক্টর উন্নত হলে কৃষক, উদ্যোক্তা ও ভোক্তা সকলেই উপকৃত হবেন। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা এই অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন এবং বাংলাদেশের কৃষিকে আধুনিক, নিরাপদ ও টেকসই করার কাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন।

এছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. নির্মল চন্দ্র রায়, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহবায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ আসাদ-উদ-দৌলা, প্রক্টর প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদসহ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেজিস্ট্রার ও আইকিউএসির পরিচালক প্রফেসর ড. এম. রাশেদ হাসনাত এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাৎস্যচাষ বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সাখাওয়াত হোসেন।