সিলেট [english_date], [bangla_date], [hijri_date]

কোরআনের দৃষ্টিতে চার শ্রেণির সফল মানুষ

admin
প্রকাশিত November 2, 2025, 12:12 AM
কোরআনের দৃষ্টিতে চার শ্রেণির সফল মানুষ


কোরআনের দৃষ্টিতে চার শ্রেণির সফল মানুষ

শাব্বির আহমদ

 

সুরা নুরের একটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা চার শ্রেণির মানুষকে একত্রে ফা-য়িযূন অর্থাৎ সত্যিকারের বিজয়ী বা সফল ঘোষণা করেছেন। ‘আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে—তারাই কৃতকার্য।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫২)

এই এক আয়াতেই কোরআন সফল মানুষের চারটি শ্রেণি নির্ধারণ করেছে, ১. আল্লাহর আনুগত্যকারী, ২. রাসুলের আনুগত্যকারী, ৩. আল্লাহভীরু ব্যক্তি, ৪. তাকওয়াবান ব্যক্তি।

১. আল্লাহর আনুগত্যকারীগণ : সফলতার প্রথম সোপান বা সফলতার ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য।

যে ব্যক্তি নিজের আকাঙ্ক্ষাকে আল্লাহর আদেশের অধীন রাখে, সেই-ই প্রকৃত মুমিন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করল, সে মহাসাফল্য অর্জন করল। (সুরা : আহযাব, আয়াত : ৭১)
তাফসির ইবন কাসিরে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর আনুগত্য মানে হচ্ছে তাঁর আদেশ পালন, নিষেধ থেকে বিরত থাকা এবং নিজের ইচ্ছাকে তাঁর আদেশের অধীন রাখা।’ ( ইবনে কাসির : ৩/২৭৭)।

অতএব যে ব্যক্তি ব্যবসা, রাজনীতি, পরিবার ও সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানকে প্রাধান্য দেয়, তার জীবনই সফলতার পথে এগিয়ে চলে।

২. রাসুলের আনুগত্যকারীগণ : আল্লাহর আনুগত্যের পর পরই এসেছে রাসুলের আনুগত্য। কারণ রাসুলই আল্লাহর আদেশের বাস্তব রূপ। পবিত্র কোরআন ঘোষণা করে, ‘যে রাসুলের আনুগত্য করল, সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল।’ (সুরা : নিসা, আ. : ৮০)

তাফসিরে কুরতুবিতে বলা হয়েছে, ‘রাসুলের আনুগত্যই আল্লাহর আনুগত্যের দরজা। কারণ তাঁর বাণী ও কর্ম আল্লাহর নির্দেশের ব্যাখ্যা।’ (তাফসিরে কুরতুবি : ১২/২৪৬)

রাসুল (সা.)-এর সম্পূর্ণ জীবনই কোরআনের বাস্তব অনুসরণক্ষেত্র। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন কোরআনের প্রতিফলন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০১৭)।

তাঁর আচরণ, নেতৃত্ব, দয়া ও ন্যায়বোধই মুসলিম জীবনের জন্য আদর্শ। যে ব্যক্তি তাঁর সুন্নাহকে অবলম্বন করে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অগ্রসর হয়।

৩. আল্লাহভীরু ব্যক্তিগণ : আয়াতে তৃতীয় গুণ বলা হয়েছে খশয়ত অর্থাৎ আল্লাহর ভয়। যারা আল্লাহকে ভয় করে এরাই অন্তরের নূরের ধারক হয়ে থাকে। তাদের অন্তরের এই ভয় কোনো আতঙ্ক নয়; বরং গভীর শ্রদ্ধা ও জবাবদিহির অনুভূতি। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহকে প্রকৃত ভয় করে তাঁর জ্ঞানী বান্দারা।’ (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮)

ইমাম তাবারি (রহ.) ব্যাখ্যা করেছেন, ‘খশিয়া মানে এমন ভয়, যা ভালোবাসা ও জ্ঞানের সঙ্গে মিশ্রিত। যে মানুষ জানে আল্লাহ মহান ও ন্যায়বিচারক, তার হৃদয়ে আল্লাহভীতি জন্ম নেয়।’ (তাফসিরে তাবারি : ২০/৩৮৭)। যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, সে গোপনে ও প্রকাশ্যে সমান। কেউ দেখছে না, এই ভেবে সে গুনাহ করে না।

সে জানে, আল্লাহর দৃষ্টি সর্বত্র বিরাজমান। এই ভয়ই তাকে পাপ থেকে রক্ষা করে ও আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে।

৪. তাকওয়াবান ব্যক্তিগণ : আয়াতে চতুর্থ গুণ ‘তাকওয়া’ অর্থাৎ যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে। এরাই হচ্ছেন সফলতার মুকুটধারী শ্রেণি। তাকওয়া মানে এমন আত্মনিয়ন্ত্রণ, যা মানুষকে সব গুনাহ থেকে বাঁচায় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে দৃঢ় রাখে। পবিত্র কোরআন ঘোষণা করেছে, ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত সেই, যে অধিক তাকওয়াবান।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘তাকওয়া এমন এক অভ্যন্তরীণ আলো, যা মানুষকে সৎপথে পরিচালিত করে, অন্যায় থেকে দূরে রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৩৫৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তুমি যেখানে থাকো, আল্লাহকে ভয় করো।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)। তাকওয়াবান ব্যক্তি কখনো অন্যায় করে না, প্রতিশোধে সীমা ছাড়ায় না, বরং আল্লাহর বিধানকেই তার নৈতিক মানদণ্ড বানায়। এই তাকওয়াই মানুষকে পরিশুদ্ধ করে, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং আখিরাতে জান্নাতের অধিকারী করে।

এই আয়াত আমাদের সামনে সফলতার এক চিরন্তন মানচিত্র এঁকে দিয়েছে। সফলতা কোনো দুনিয়াবি প্রাপ্তির নাম নয়, বরং আয়াতে বর্ণিত চারটি আলোকরশ্মির সমন্বয়। এই চার গুণ যার জীবনে একত্রে বিকশিত হয়, তার জন্য আল্লাহর ঘোষণা—‘তারাই সফল।’

সুতরাং প্রকৃত সফলতা ধন বা পদমর্যাদায় নয়, বরং আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার মধ্যে। যে মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যে জীবনকে সঁপে দেয়, অন্তর আল্লাহভীতিতে পরিপূর্ণ রাখে এবং তাকওয়ার বর্মে নিজেকে সুরক্ষিত রাখে, সে-ই হলো কোরআনের দৃষ্টিতে সফলতম মানুষ।

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল, জামিয়া ইমদায়িদা মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা

বিডি প্রতিদিন