Today November 1, 2025, 03:02 AM

উম্মতে মোহাম্মদীর চারিত্রিক মাধুর্য

admin
Published November 1, 2025, 03:02 AM
উম্মতে মোহাম্মদীর চারিত্রিক মাধুর্য


উম্মতে মোহাম্মদীর চারিত্রিক মাধুর্য

ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন সোহেল

 

মহান আল্লাহ হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টিকুলের সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘(হে রসুল!) আপনি বলুন, হে মানবমণ্ডলী আমি তোমাদের সকলের জন্যই আল্লাহর রসুল।’ (সুরা আল আ’রাফ ৭ : আয়াত ১৫৮)।

রসুল (সা.)-এর অনুসারীদের উম্মতে মোহাম্মদী অর্থাৎ হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত বলা হয়। আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি। দয়াল রসুল (সা.)-এর প্রকৃত উম্মত হওয়ার জন্য বিশেষ গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য থাকা অপরিহার্য। তাঁর সুমহান আদর্শ ও চরিত্র নিজের মধ্যে ধারণকারী ব্যক্তি হলেন প্রকৃত উম্মতে মোহাম্মদী।

আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য তো আল্লাহর রসুল (সা.)-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা আল আহজাব ৩৩ : আয়াত ২১)। হজরত রসুল (সা.) ছিলেন শান্তির দূত। গোটা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই জগতে তাঁর আগমন।

হজরত রসুল (সা.)-এর অনুসারীগণ মুসলমান বা মুসলিম জাতি হিসেবে পরিচিত। মুসলিম শব্দের উৎপত্তি ইসলাম শব্দ থেকে। উভয় শব্দের শব্দমূল ‘সিলমুল’, যার অর্থ শান্তি। ইসলাম শব্দের বাংলা অর্থ আত্মসমর্পণ করা, বশ্যতা স্বীকার করা, নিজেকে সমর্পণ করে দেওয়া। আর মুসলমান শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণকারী, বশ্যতা স্বীকারকারী ও শান্তিতে বসবাসকারী।

উম্মতে মোহাম্মদীর আচার-আচরণ, চিন্তাভাবনা, মানসিকতা, কর্মস্পৃহা সব কাজ হজরত রসুল (সা.)-এর শিক্ষানুযায়ী হওয়া অত্যাবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে রসুল (সা.), অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা আল কলম ৬৮ : আয়াত ৪)।

দয়াল রসুল (সা.)-এর চারিত্রিক মাধুর্য হলো আখলাকে হামিদাহ, একে আখলাকে হাসানাহ বা হুসনুল খুলক বলা হয়। আখলাকে হাসানাহর বাংলা অর্থ সুন্দর চরিত্র। হজরত রসুল (সা.)-এর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে সুন্দর চরিত্র তথা সততা, সত্যবাদিতা, দয়া, ক্ষমা, সদাচার, সৌজন্যমূলক আচরণ, সহানুভূতি, সহমর্মিতা ইত্যাদি। একজন মুসলমান হজরত রসুল (সা.)-কে অনুসরণের মাধ্যমে উল্লিখিত গুণাবলির অধিকারী হতে সক্ষম হন।

আল্লাহতায়ালা রসুল (সা.)-কে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘হে মাহবুব (সা.), আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। অবশ্যই আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়াময়।’ (সুরা আলে ইমরান ৩ : আয়াত ৩১)।

মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘রসুল (সা.) তোমাদের যা দেন, তা তোমরা গ্রহণ করো, আর যা থেকে তোমাদের নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর ৫৯ : আয়াত ৭)।

হজরত রসুল (সা.) মানবজাতিকে নৈতিকতার শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মহান নৈতিক গুণাবলিকে পরিপূর্ণতা দান করার জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (বুখারি শরিফ)।

তাঁর শিক্ষা ও আদর্শসমূহের মাঝে নৈতিকতা বিদ্যমান। তাঁকে সর্বাপেক্ষা বেশি ভালোবেসে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব। নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হতে না পারলে মুমিন হওয়া যায় না। দয়াল রসুল (সা.) বলেন, ‘চরিত্রের বিচারে যে লোকটি উত্তম, মুমিনের মধ্যে সেই পূর্ণ ইমানের অধিকারী।’ (তিরমিজি শরিফ)।

তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই লোকটি আমার কাছে অধিক প্রিয়, যার আখলাক (নৈতিকতা) সবচেয়ে সুন্দর।’ (বুখারি শরিফ)। নৈতিকতাসম্পন্ন মুমিন ব্যক্তিকে হজরত রসুল (সা.) সর্বোত্তম বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম, যার চরিত্র উত্তম।’ (বুখারি ও মুসলিম শরিফ)।

সুন্দর চরিত্র নিজের মাঝে বিকশিত করে প্রকৃত মুসলমান হতে পারলে মুমিন হওয়ার যোগ্যতা অর্জিত হয়। প্রকৃত মুসলমান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পিত হয়ে থাকে। হজরত রসুল (সা.)-এর শিক্ষা মোতাবেক মুসলমানদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো স্রষ্টার ওপর পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। এ ছাড়া নিজে শান্তিতে থাকা এবং মানবজাতিকে শান্তিতে বসবাস করার সুযোগ করে দেওয়া। এটি হচ্ছে হজরত রসুল (সা.)-এর ইসলাম।

রসুল (সা.) বলেন, ‘মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিমের সূত্রে মেশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা ১২)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না।’ (সুরা বাকারা ২ : আয়াত ১১)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা মায়িদা ৫ : আয়াত ৬৪)।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর ফেতনা হত্যার চেয়েও মহাপাপ।’ (সুরা বাকারা ২ : আয়াত ২১৭)। আল্লাহ বলেন, ‘কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে, সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সুরা মায়িদা ৫ : আয়াত ৩২)।

হজরত মোহাম্মদ (সা.) হলেন দয়া, মায়া, প্রেম, ভালোবাসা ও করুণার রসুল। তাঁর সহবতে এসে আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের বর্বর মানুষেরা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সত্যের আলোয় আলোকিত হয়ে শ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদায় উন্নীত হন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

বিডি-প্রতিদিন