Manual2 Ad Code
সিলেট-৩ আসন: সব দলে একক, বিএনপিতে হাফ ডজন
ডেস্ক রিপোট
সুরমা, কুশিয়ারা আর হাকালুকি বেষ্টিত তিন উপজেলা (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ) নিয়ে সিলেট-৩ সংসদীয় আসন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় সরগরম এখন নির্বাচনী এলাকা। আসনটিতে দেশ ও প্রবাসে নির্যাতিত ও ত্যাগী অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করছেন। সিলেট শহরলাগোয়া আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দল একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। আর বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন হাফ ডজন নেতা।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এমএ সালাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহসভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির উপদেষ্টা মোশাহিদ হোসাইন।
Manual6 Ad Code
এছাড়া দলীয় একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা দক্ষিণ জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর ও বর্তমান জেলা যুব বিভাগের সভাপতি মাওলানা লোকমান আহমদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ, খেলাফত মজলিস সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী রাজু, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নজরুল ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা মইনুল ইসলাম আশরাফী।
ইসলামী দলগুলোর মধ্যে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে জামায়াতে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস। নির্বাচনী এলাকায় এ দুই প্রার্থী নিয়মিত সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠকসহ বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
Manual4 Ad Code
একসময় সিলেট-৩ আসনভূক্ত উপজেলাগুলোতে জামায়াতের সাংগঠনিক অবস্থান খুব শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু গত দেড় দশকে সাংগঠনিক অবস্থা জোরদার হয়েছে। এক সময় আসনভূক্ত তিন উপজেলার মধ্যে দুইটিতে জামায়াতের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার আসনটিতে দলীয় প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদকে বিজয়ী করতে দলের নেতাকর্মীরা আধাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন।
সিলেট-৩ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা দিলওয়ার হোসেন এলাকায় একজন সজ্জন ও উপকারী মানুষ হিসেবে পরিচিত। এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে তিনি সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন। স্বচ্ছ ইমেজের অধিকারী দিলওয়ার হোসেনের পক্ষে তাঁর দলীয় নেতাকর্মীরাও আসনটিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যারিস্টার এমএ সালাম ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর দেশে ফিরে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক প্রচারণা চালান। গত কয়েকদিন আগে তিনি ফের দেশে ফিরে এসেছেন। শনিবার তিনি চন্ডিপুলে গণমিছিলের নামে বিশাল শোডাউন করেছেন। রাজনীতির বাইরে তিনি তাঁর মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্টের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যানে কাজ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের হুমকিতে গত ১৭ বছর দেশে ফিরতে পারেননি এমএ মালিক। রাশিয়ান সন্ত্রাসী ভাড়া করে যুক্তরাজ্যেও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি মালিকের। এছাড়া যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের কারণে তাঁর গ্রামের বাড়ি পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ। লন্ডনে কারাভোগও করেন তিনি।
Manual1 Ad Code
ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে ফিরে এমএ মালিক সিলেটে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দুটি বিশাল সমাবেশ করেন। এছাড়া তিনি দলীয় কর্মসূচি ছাড়াও এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করে যাচ্ছেন। এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকায় ডিপটিউবওয়েল স্থাপন, চক্ষুসেবা কার্যক্রম এবং আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামীতে বড় পরিসরে শীতবস্ত্র বিতরণেও পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে দলকে সুসংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তিনি বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও আন্দোলনে অংশ নেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এলাকার মানুষের সুখে-দু:খে পাশে রয়েছেন। তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জে প্রতিদিন ঘুরছেন। সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের মাধ্যমে তিনি বিএনপির সাথে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি সিলেটের যোগাযোগ ভোগান্তি নিরসন এবং উন্নয়নবঞ্চনার প্রতিবাদে তাঁর ডাকে বিশাল গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে তিনি প্রতিদিনই এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই তিনি নির্বাচনী এলাকায় গণমিছিল ও সমাবেশ করছেন।
Manual3 Ad Code
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক, সাবেক ছাত্রনেতা আবদুল আহাদ খান জামাল দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে নির্যাতিত নেতা হিসেবে পরিচিত। ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল আন্দোলন-সংগ্রামে জামাল ছিলেন রাজপথে সক্রিয়। দলীয় রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি বেশ কয়েকবার কারাগারে যেতে হয়েছে। দলের দুর্দিনে রাজপথে তার সক্রিয় ভূমিকা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এলাকায় তিনিও ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচার-প্রচারণায়।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত আন্দোলন সংগ্রামে আমি দলীয় নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে মাঠে ছিলাম। করোনা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম। আমার রাজনৈতিক কর্মকান্ড, ত্যাগ ও জনপ্রিয়তা বিবেচনায় দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস রাখি। আর নির্বাচিত হলে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে প্রাধান্য দেব। এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ও বন্যা মোকাবেলায় সুরমা-কুশিয়ারা খননে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এমএ মালিক দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘হাসিনা বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আমি দেশে-বিদেশে ভিকটিম হয়েছি। বিদেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে সর্ববৃহৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছি। হাসিনার চায়ের দাওয়া প্রত্যাখান করেছি। অনেকে হাসিনার আমলে ‘ম্যানেজ পার্টি’ হয়ে দেশে আসা যাওয়া করেছেন। কিন্তু আমি মায়ের লাশ নিয়ে দেশে আসতে পারিনি। দল ভিকটিমের পক্ষে, তাই একজন ভিকটিম হিসেবে আমি মনোনয়ন আশা করতেই পারি।’
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ জানান, আসনটিতে এখন জামায়াত সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। সাধারণ মানুষ আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।