মানুষ তার যাপিত জীবনের দীর্ঘ যাত্রায় নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়। ভোগ করে বিভিন্ন রকম সুখ-দুঃখ। মোকাবেলা করতে হয় নানা ধরনের অভাবনীয় পরিস্থিতির। ধীরে ধীরে বয়সের পরিবর্তন, ক্লান্তি ও ক্ষয় থমকে দিতে চায় জীবন চলার গতিপথ।
যার পরিপ্রেক্ষিতেই পৃথিবীর এই সীমিত জীবনে কখনো কখনো প্রবাহিত হয় হতাশার স্রোত। আবার কখনো সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধির আনন্দে আমরা হই আপ্লুত। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে এমন একটি জীবনও সম্ভব, যেখানে দুঃখ নেই, ক্লান্তি নেই, বয়সের প্রভাব নেই? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ আছে। আর সেই স্বপ্নময় জীবনের প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের জান্নাতের মাধ্যমে প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে; কখনো দুঃখভোগ করবে না। তার পোশাক কখনো পুরনো হবে না, আর তার যৌবন কখনো শেষ হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৩৬)
জান্নাত এমন একটি স্থান, যেখানে সময়ের বাধা নেই। পৃথিবীতে আমরা বয়স বৃদ্ধির শিকার হই, শক্তি ফুরিয়ে যায়, সৌন্দর্য হ্রাস পায়।
কিন্তু জান্নাতে মানুষের জীবন চিরনবীন। ক্লান্তি, দুঃখ, ক্ষয়—সবই সেখানে অচল। মহানবী (সা.) এই বাণী আমাদের জানিয়ে দেন যে জান্নাতের অধিবাসীরা চিরস্থায়ী সুখের অনন্য এক বাস্তবতা ভোগ করবেন।
‘তার পোশাক কখনো পুরনো হবে না’—এই বাক্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর বার্তা। পৃথিবীতে মানুষ যতই সুন্দর পোশাক পরুক, তা ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়।
কিন্তু জান্নাতে আল্লাহ তাআলার করুণায় এমন এক সৌন্দর্য থাকবে, যা অক্ষয় ও চিরন্তন। একইভাবে ‘তার যৌবন কখনো শেষ হবে না’—পৃথিবীর যুবক বয়স থেকে আস্তে আস্তে বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রক্রিয়া জান্নাতে অচল। কারণ সেখানে প্রত্যেক মানুষ থাকবে চিরকাল তরুণ, দীপ্তিময় এবং পূর্ণ শক্তিতে বলীয়ান। জান্নাতের জীবন শুধুই সৌন্দর্য বা আরামের স্থান নয়, এটি এক অনন্ত আনন্দের, শান্তির ও পরিপূর্ণতার জগৎ। যেখানে মিলবে হৃদয় ভরা আনন্দ, চোখ ভরা দীপ্তি এবং অন্তর ভরা প্রশান্তি। পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী সুখের তুলনায় জান্নাতের সুখ চিরস্থায়ী।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই পরহেজগাররা নিরাপদ অবস্থানে থাকবে, উদ্যানসমূহে ও প্রস্রবণসমূহে।’ (সুরা : আদ-দুখান, আয়াত : ৫১-৫২)
এই আয়াত আমাদের দেখায়, জান্নাতে প্রতিটি মুহূর্তই নিরাপদ, প্রশান্ত ও পরিপূর্ণ।
হাদিসটি আমাদের আজকের জীবনেও দিশারি। এটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে পৃথিবীর দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও আল্লাহর প্রতি ঈমান ও সৎ আমল আমাদের অন্তরে জান্নাতের ঝলক দিতে পারে। চিরস্থায়ী সুখের জন্য পথ প্রস্তুত করতে হবে ঈমান, ধৈর্য ও নৈতিক জীবনযাপনের মাধ্যমে।
সব শেষে আমাদের দোয়া হওয়া উচিত ‘হে আল্লাহ, আমাদের জান্নাতুল ফিরদাউসে প্রবেশ করাও, আমাদের পোশাক পুরনো হতে দিয়ো না, আমাদের যৌবন ক্ষয় হতে দিয়ো না।’
জান্নাতের এই অনন্ত প্রভাতে মানুষ থাকবে অবিরাম আনন্দে ভরপুর। যেন চিরনবীন একটি সকাল কখনো শেষ হয় না। সেই জান্নাতের দিকে সঠিক পন্থা ও সঠিক উপায়ে পথ চলাই মুমিনের কাজ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে চিরস্থায়ী জান্নাতের অনাবিল সুখের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক
saifpas352@gmail.com
বিডি প্রতিদিন