আইএমএফের পর্যবেক্ষণ, নির্বাচন ঘিরে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে
আইএমএফের পর্যবেক্ষণ, নির্বাচন ঘিরে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে
admin
প্রকাশিত November 4, 2025, 02:16 AM
আইএমএফের পর্যবেক্ষণ, নির্বাচন ঘিরে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে
নির্বাচিত সরকার এলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে গতি বাড়বে। এতে দেশের অর্থনীতির চাপ ধীরে ধীরে কমে আসবে
মানিক মুনতাসির
সরকার বলছে, অর্থনীতির পতন ঠেকানো গেছে। এ জন্য সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা ছিল সেটা কিছুটা কমেছে। আর পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ বলছে, অর্থনীতির চাপ কমেনি। বরং বেড়েছে। কেননা বিনিয়োগ স্থবিরতা, বেকারত্ব, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক ঋণের সুদের হার, রপ্তানি ও রাজস্ব খাতের মন্দা পরিস্থিতি অর্থনীতির গতিকে মন্থর করেছে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ, বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়াতে না পারা এবং অনুন্নয়ন খাতের ব্যয়ের লাগাম টানতে না পারায় সামষ্টিক অর্থনীতির চাপ আরও বেড়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো চাপের মুখে রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই চাপ আরও বাড়তে পারে।
অবশ্য এই চাপ সামাল দিতে কৃচ্ছ্রাসাধনের পথেই হাঁটছে সরকার। জরুরি প্রয়োজন ব্যতিরেকে বিদেশ ভ্রমণ ও গাড়ি কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে অর্থবছরের বাকি সময়েও। একই সঙ্গে ফেব্রুয়ারির আগেই বাজেট সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সে কাজ শুরুও করেছে অর্থবিভাগ। অবশ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন যে পে-কমিশন গঠন করা হয়েছে; সে কমিশন খুব দ্রুত গতিতে কাজ করছে। নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই নতুন পে স্কেলে বেতন পেতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন সরকারি কর্মচারীরা। ফলে নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের জন্য অতিরিক্ত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন পড়বে। যা সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও চাপ বাড়াবে। এদিকে ঢাকা সফররত আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছে। রবিবারও অর্থবিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এ সময় সংস্থাটি দেশের অর্থনীতি মন্থরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে সংস্কার কার্যক্রমগুলো শেষ করতে না পারলে নির্বাচনের পর নতুন সরকার এসে যদি সেগুলো কনটিনিউ না করে তবে অর্থনীতিতে চাপ আরও বাড়তে পারে। এ জন্য সংস্কার কার্যক্রমগুলো দ্রুত শেষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৬০ ডলারে নামবে, যা এখন প্রতি ব্যারেল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ ডলারে। ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষি ও খাদ্য খাতে। ফলে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭ শতাংশ কমতে পারে। মূলত চীনে তেলের ব্যবহার স্থিতিশীল। ফলে বৈশ্বিকভাবে তেলের বাজারে অস্থিরতা থাকবে না। এতে করে আগামী বছরের আগে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির গতি মন্থরই থাকবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।
অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, আইএমএফ বলছে মুদ্রানীতির কার্যকারিতা বাড়াতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হারকে আরও বাজারনির্ভর কাঠামোয় আনতে হবে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদের হার নির্ধারণ পদ্ধতি, মুদ্রানীতির কাঠামো এবং তারল্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তাারিত তথ্য তাদের সরবরাহ করতে হবে। দেশের ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। যা খুব সহসাই কমার কোনো লক্ষণ নেই বলে মনে করে সংস্থাটি।
সংস্থার শর্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার কথা থাকলেও বর্তমানে তা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত বছরের আগস্টে সরকারের পরিবর্তনের পর লুকিয়ে রাখা প্রকৃত খেলাপি ঋণের চিত্র প্রকাশ পেলে তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা, যা মাত্র এক বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বেড়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও খেলাপির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যদিও শর্ত অনুযায়ী তা ৫ শতাংশের নিচে রাখার কথা ছিল।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, বিশ্ব অর্থনীতি ধীর গতিতে এগোচ্ছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী যা আরও অন্তত এক বছর স্থায়ী থাকতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমেও রয়েছে ধীরগতি। তবে আগামী ২০২৬ সালের পর দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির গতি কিছুটা বাড়বে। এদিকে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বিরাজ করছে শ্লথ গতি। কেননা ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, সাধারণ মানুষ সবাই যেন জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে। সবার মধ্যে প্রত্যাশা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত নতুন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসবে। তার আগ পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।