Today May 4, 2025, 06:31 AM

শেখ হাসিনা: অডিও বার্তার অন্তরালে লুকানো ভয় ও নীরবতা

Published May 4, 2025, 06:31 AM
শেখ হাসিনা: অডিও বার্তার অন্তরালে লুকানো ভয় ও নীরবতা

ঢাকা: ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা, ইতিহাসের ভয়াবহতম ছাত্র গণহত্যা, এবং পদত্যাগপূর্ব দমন-পীড়নের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। তবে মাঝে মাঝে তাঁর অডিও বার্তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে—যেখানে তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন, সমর্থকদের উদ্দেশে আহ্বান জানাচ্ছেন, এবং দেশের রাজনীতি নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে: কেন তিনি ক্যামেরার সামনে আসছেন না?

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে শেখ হাসিনার অন্তত চারটি অডিও বার্তা প্রচারিত হয়েছে, যেগুলোর প্রত্যেকটিতে তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু ভিডিও আকারে একটিও বার্তা আসেনি। তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, তাঁর বর্তমান মানসিক বা শারীরিক অবস্থা কেমন—এসব প্রশ্নের উত্তর আজও স্পষ্ট নয়।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে সাধারণ ছাত্র হত্যার অভিযোগ ওঠে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গণভবন ঘেরাওয়ের মধ্যে দিয়ে যে বিদ্রোহ শুরু হয়, তার ফলাফল—সহস্রাধিক মৃত্যুর অভিযোগ এবং দেশত্যাগ। এখনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই পরিস্থিতিতে ক্যামেরার সামনে আসা মানে শুধু সংবাদ নয়, নিজেকে গণরোষের প্রকাশ্য মুখোমুখি করা। অনেকের মতে, এই কারণেই হয়তো তিনি সরাসরি উপস্থিতি থেকে বিরত থাকছেন।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এটি একটি সাবলীল কৌশল। শেখ হাসিনা তার বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছাতে চান ঠিকই, তবে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে—যেখানে তাঁর মুখাবয়ব, চোখের ভাষা বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ জনগণের কাছে পৌঁছাবে না। এতে করে তিনি বার্তার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন, অথচ নিজেকে দৃশ্যত জনমানসের বাইরে রাখতে পারছেন।

অন্যদিকে, কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এটিকে ব্যক্তিগত সংকট হিসেবেও দেখছেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের পর এমন হঠাৎ পতন মানসিকভাবে কাউকে দারুণভাবে ভেঙে দিতে পারে। হয়তো নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতেই তিনি এখন নীরবতা বেছে নিয়েছেন।

বর্তমানে শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। দিল্লির কাছাকাছি এক নিরাপদ স্থানে তাঁকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থানে থেকে ক্যামেরার সামনে আসলে তাঁর আশ্রয়ের স্থান প্রকাশিত হতে পারে, যা তাঁর বা আশ্রয়দাতা দেশের জন্য নিরাপত্তাজনক নাও হতে পারে।

ভারত সরকারের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি, তবে অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে—ভারত চাইছে না, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা কোনোভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সামনে আসুন এবং বিতর্ক সৃষ্টি করুন।

সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এই পরিস্থিতিকে দেখছেন একটি “ভীতুর ছলনা” হিসেবে। সামাজিক মাধ্যমে একটি বহুল আলোচিত মন্তব্য: “যিনি একসময় প্রতিদিন মিডিয়ায় থাকতেন, আজ তিনি অডিও ছাড়া নিজের মুখও দেখাতে পারছেন না—এটাই প্রমাণ করে সত্যিকারের জনরোষ কতটা ভয়ংকর।”

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কিছু সাবেক নেতা বা সমর্থক এখনো বলছেন, এটি একটি কৌশল। “তিনি সময় নিচ্ছেন, ঘুরে দাঁড়াবেন,”—এমন বিশ্বাস এখনো অনেকের মাঝে আছে।

একজন নেতা শুধু বক্তব্যে নয়, উপস্থিতির মাধ্যমেও জনগণের আস্থা অর্জন করেন। শেখ হাসিনার এই অনুপস্থিতি তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে যেমন দুর্বল করে তুলছে, তেমনি তাঁর মানবিক অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। অডিও বার্তা দিয়ে জনগণের বিশ্বাস অর্জন করা কঠিন—বিশেষ করে যখন জনগণের চোখে রক্ত, অশ্রু ও শোকের ইতিহাস এখনো তরতাজা।

Sharing is caring!