সিলেট [english_date], [bangla_date], [hijri_date]

নির্বাচনী মাঠে সিলেট বিএনপির মুকুটহীন সম্রাট শামছুজ্জান জামান

admin
প্রকাশিত November 27, 2025, 04:02 AM
নির্বাচনী মাঠে সিলেট বিএনপির মুকুটহীন সম্রাট শামছুজ্জান জামান

সিলেটের রাজপথের ল ড়া কু নেতা জামান, নির্বাচনী মাঠে আম-জনতার প্রিয়জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। সিলেটের বহুল আলোচিত রাজনৈতিক চরিত্র। ছাত্র রাজনীতি দিয়ে শুরু, তারপর পৌঁছেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃত্বে। ছিলেন কেন্দ্রীয় সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক। সিলেটের রাজপথের এই লড়াকু নেতা এবার নেমেছেন সিলেট-৪ আসনে দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে। একসময়ে যে জামান ছিলেন বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের আতঙ্ক, এখন সেই জামানে তটস্থ খোদ বিএনপির অনেক প্রভাবশালী নেতা। জামান রাজপথে সক্রিয় মানেই ক্ষীণ হয়ে আসবে সিলেট বিএনপির অনেক নেতার দাপট। শেষ পর্যন্ত ক্যারিশমা দেখিয়ে সিলেট-৪ আসনে জামান মনোনয়ন বাগিয়ে নেন কি-না সে আতঙ্কও দেখা দিয়েছে আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির অনেক নেতার মাঝে।

অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বৈচিত্র্যময়। ছাত্র রাজনীতির সময়েই তিনি নিজ নামে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব বলয়। যেটি এখন সিলেটের রাজনীতিতে ‘জামান গ্রুপ’ নামে পরিচিত। বিএনপির সুসময়ের চেয়ে দুঃসময়েই এই জামান গ্রুপ ছিল রাজপথের লড়াকু কাফেলা।

গত ১৬ বছর আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে সিলেটে জামান গ্রুপ ছিল সবচেয়ে সোচ্চার। রাজপথ আর রাজনীতির ময়দানে যখন বিএনপি নেতাকর্মীরা এক প্রকার কোনঠাসা, পুলিশ আর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে তটস্ত, তখনো জামান গ্রুপের নেতা হিসাবে অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান রাজপথে দাপট দেখিয়েছেন। তার সংগ্রামী ভূমিকা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের আশা জাগিয়েছে। হরতাল অবরোধসহ প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জামান ও তাঁর বলয়ের নেতাকর্মীদের সামলাতে পুলিশ এবং সরকার সমর্থকদের বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হয়েছে, যদিও শেষ পর্যন্ত জামান ছিলেন অপ্রতিরোধ্য।

 

আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় চলে আসে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার দিন। ওই দিন সিলেট বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও যথারীতি নিজ বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে ছিলেন অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। শুধুই রাজপথ নয়, সেদিন বলতে গেলে প্রায় সারাদিন সিলেটের ঐতিহাসিক কোর্ট পয়েন্টসহ পুরো বন্দরবাজার এলাকাটি ছিল তাদের নিয়ন্ত্রনে। পুলিশ এবং ছাত্রলীগ- যুবলীগের মারমুখী অ্যাকশনের মুখে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তাঁর গ্রুপের নেতাকর্মীরা। শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছে তারা।

দলের জন্য নিরন্তর ত্যাগ ও শ্রম দিতে গিয়ে ঘরে অসুস্থ মা’র দিকে ঠিকমতো নজর দিতে পারেন নি জামান। পারেন নি সেবা শশ্রুষা করতে। দলের জন্য তিনি ছিলেন শতভাগ নিবেদিত। আর তাই প্রায় দেড় যুগ ধরে আওয়ামী সরকারের দায়ের করা অর্ধশতাধিক মামলায় আসামী হতে হয়েছে তাকে। হুলিয়া নিয়ে ঘুরেছেন বিপদসংকুল পথে। এক মুহুর্ত ছিল না শান্তি ও স্বস্তি।

এতকিছুর পরও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে বঞ্চিত করা হয় জামান গ্রুপের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের। সহযোদ্ধারা মূল্যায়িত না হওয়ায় অভিমান করেন জামান। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট অভিমানী জামান পদত্যাগ করেন। সহযোদ্ধাদের বঞ্চিত রেখে পদে থেকে রাজনীতি করার অভিপ্রায় নেই বলে ঘোষণা দেন।

 

রাজনীতি থেকে দুরে থাকলেও নিস্ক্রিয় হয়ে যাননি জামান। সামাজিক সংগঠন ‘সলিডারিটি মুভমেন্ট’ নিয়ে সমমনা সহকর্মী, অগ্রজ-অনুজদের নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথেই ছিলেন, ছিলেন মানুষের পাশে।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কালোমেঘের ঘনঘটা চলছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আসে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের উত্তাল দিনগুলো। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজপথে ছিলেন অ্যাডভোকেট জামান। একা নয়, নিজ বলয়ের নতাকর্মীদের নিয়েই রাজপথে ছিলেন সরব। পড়েছেন গুলির মুখে, পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হন তিনি। তবুও রাজপথ ছাড়েন নি।

সেই জামান এবার দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে নেমেছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে (কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর) ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হতে চান তিনি। এই আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন নেতা মাঠে রয়েছেন মনোনয়ন লড়াইয়ে।

 

জামান নিজের লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছেন। গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তিনি এ তিন উপজেলায় রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে ব্যর্থ হলেও দলের জন্য কাজ করেছেন, মাঠে ছিলেন একেবারে অতন্দ্র প্রহরীর মতো।

এবারও তিনি কাজ করছেন। প্রায় প্রতিদিন এ তিন উপজেলার কোনোনা কোনোটিতে যাচ্ছেন, সভা-সমাবেশ, মতবিনিময় গণসংযোগ করছেন।

এসব সভা-সমাবেশে শামসুজ্জামান জামান বলছেন, সীমন্তবর্তী এ তিনটি উপজেলা খনিজ সম্পদে যথেষ্ট সমৃদ্ধ। এই আসনের সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনী এলাকার মানুষের ভাগ্যের কালোমেঘ কাটেনি।

তিনি নির্বাচিত হলে এই আসনের সব ধরনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করবেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সামগ্রীক উন্নয়নে কোম্পানীগঞ্জ-জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট আসনের খনিজ সম্পদসহ পর্যটন সম্ভাবনাকে আক্ষরিক অর্থেই কাজে লাগাবেন। এই আসনটিকে পরিণত করবেন অর্থনৈতিকভাবে দেশের অন্যতম প্রধান একটি সমৃদ্ধ জনপদে- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান।