সিলেট [english_date], [bangla_date], [hijri_date]

সিলেটে জব্দ বালু নিলামে ‘শায়েস্তা খাঁর দরে’ বিক্রি, গচ্ছা ১৩ কোটি! জেলা প্রশাসক মহোদয় কে পুরুস্কৃত করা উচিত !

admin
প্রকাশিত November 22, 2025, 02:16 PM
সিলেটে জব্দ বালু নিলামে ‘শায়েস্তা খাঁর দরে’ বিক্রি, গচ্ছা ১৩ কোটি! জেলা প্রশাসক মহোদয় কে পুরুস্কৃত করা উচিত !

সিলেটে জব্দ বালু নিলামে ‘শায়েস্তা খাঁর দরে’ বিক্রি, গচ্ছা ১৩ কোটি! জেলা প্রশাসক মহোদয় কে পুরুস্কৃত করা উচিত !

 

ফিরে দেখা : যতদিন আমলারা বুঝবেনা তারা জনগণের চাকর ! ততদিন জনগণের কোন স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবেনা- মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী

ডেস্ক রিপোট

 

শায়েস্তা খাঁ। মোগল আমলে বাংলার একজন বিখ্যাত শাসক। কথিত আছে, তার শাসনামলে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। সিলেটে বালুমহাল থেকে জব্দ করা বালুর সরকারি নিলাম ডাকের দর অনেকটা সেই শায়েস্তা খার আমলকে মনে করিয়ে দেয়। ৫০ থেকে ৭৫ টাকা ঘনফুট দরের বালু সরকারি নিলাম ডাকে মাত্র দুই টাকা ফুট দরে বিক্রি করা হয়েছে। বালুর এ দরকে বলা হচ্ছে, ‘শায়েস্তা খার দর’। এতে সরকারের অন্তত ১৩ কোটি টাকা গচ্ছা গেছে।

অভিযোগ উঠেছে, একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবে একতরফা বালুর বাজারদরের সঙ্গে আকাশ-পাতাল ফারাক রেখে নিলাম ডাক সম্পন্ন করা হয়। দুই টাকা ফুট দরে বালু কিনেছেন কয়েস আহমদ নামের একজন। তিনি সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক।

নিলামে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের একটি অংশের যোগাসাজশে বালুর দর দুই টাকায় নামিয়ে নিলাম সম্পন্ন করা হয়। রবিবার (২৩ নভেম্বর) বালুর ক্রেতাকে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার দেওয়ার কথা।

সরকারি নিলামের অনলাইন বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বালুমহাল বহির্ভূত এলাকা থেকে জব্দ করা বালুসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রকাশ্য নিলাম ডাক সম্পন্ন হয় ১৯ নভেম্বর। এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ ঘনফুট ও ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৯ ঘনফুট বালুর নিলাম ডাক হয়। বালুর বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রায় ১৩ কোটি টাকার বালুর নিলাম ডাকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ৯ জন ব্যবসায়ীর। কিন্তু নিলাম ডাকের সময় অনুপস্থিত থাকেন আটজন। অংশ নেন কেবল কয়েস আহমদ নামের একজন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিলাম ডাকের প্রথম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বালুর দর প্রতি ফুট সাড়ে ৯ টাকা ডাক উঠেছিল। বাজারদরের সঙ্গে অসামঞ্জস্য থাকায় তখন দাম বাড়াতে দ্বিতীয় দফা নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়।

গত ২২ অক্টোবর সেই নিলাম ডাকের নথি থেকে জানা গেছে, ৯ জন ব্যবসায়ী অংশ নেন। সর্বোচ্চ দর ছিল সাড়ে ৯ টাকা। বাকিরা কোনো দর হাঁকাননি। দ্বিতীয় দফায় এসে দর নামে ৭ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ দুই টাকা ৬৮ পয়সা।

নিলাম ডাকসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বালু ৩৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে নিলাম ডাকের মধ্যে সরকারের প্রায় ১৩ কোটি টাকা গচ্চা গেছে।

শনিবার (২২ নভেম্বর) যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে নিলাম কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা (নাজির) ফাইজুল ইসলাম অফিস বন্ধ থাকায় এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে অপরাগত প্রকাশ করেন।

সূত্র জানায়, ‘শায়েস্ত খা দর’ নির্ধারণ করে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেছেন এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রকাশ্য নিলাম ডাক হয়েছে। এখানে রাখঢাকের কিছু নেই। নিলাম সম্পন্ন করা দপ্তরে এসে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। অফিস বন্ধ থাকায় ফোনে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে না।’

 

নিলাম ডাকে বালুর ক্রেতা কয়েস আহমদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার নেতৃত্বাধীন বালু সিন্ডিকেটটি রবিবার নিলাম ডাকের ওয়ার্ক ওয়াডার নেওয়ার তোড়জোর করছে।

জানা গেছে, নিলাম ডাকে শায়েস্তা খার দর ঢাকতে দ্রুত সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার গ্রহণপূর্বক নিলামের বালু অপসারণ তথা ক্রেতার হেফাজতে নিতে ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছে। প্রথম দফার নিলামে অংশ নেওয়া বালু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছয় মাসের আবেদন মঞ্জুর হলে নিলামের বালু অপসারণের নামে বালু আহরণপূর্বক পুরো নিলাম ডাকের সমপরিমাণ বালু আহরণে সক্রিয় রয়েছে সিন্ডিকেটটি। এতে করে ১৩ কোটি টাকার বালুর সঙ্গে আরও প্রায় দ্বিগুণ বালু মিলিয়ে সরকারের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বালু লুটের তৎপরতা চলছে।

এদিকে, সরকারি নিলাম ডাকে বালু বিক্রির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়েছে। ‘বালুর ফুট ২ টাকা! আহারে সিন্ডিকেট! ১৩ কোটি টাকার বালু মাত্র ৩৮ লাখ টাকায় বিক্রি?’ এমন প্রশ্ন রেখে ফেসবুকে ‘এ এইচ আরিফস’ আইড থেকে একটি স্ট্যাটাস দিলে তাতে কমেন্টে অনেকেই নানা প্রশ্ন তুলেছেন। জব্দের বালুর নিলাম ডাকে ‘শায়েস্তা খার দর’ বিষয়টি ফেসবুকে আলোচিত হচ্ছে।

সুত্র : খবরের কাগজ