মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা: সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধান উপদেষ্টা
মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা: সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধান উপদেষ্টা
admin
প্রকাশিত November 21, 2025, 01:24 PM
মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা: সশস্ত্র বাহিনী দিবসে প্রধান উপদেষ্টা
ডেস্ক রিপোট
সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) ঢাকার সেনানিবাসে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। এই যুদ্ধে অর্জিত বিজয়ের মাধ্যমেই পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন অনুযায়ী একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ আয়োজিত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের উত্তরাধিকারীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বীর জনগণের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন একটি বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, জনকল্যাণমুখী ও স্বাধীন রাষ্ট্র, আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও উল্লেখ করেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার মূল লক্ষ্য হলো জনকল্যাণ ও মানবিকতা। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে আমরা বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে এই দেশের জনগণই যেন সব ক্ষমতার উৎস হয়ে ওঠে এবং বাংলাদেশ মানবিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে স্বীকৃতি পায়।’
১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এই দিনটি আমাদের বিজয়ের ইতিহাসে এক যুগসন্ধিক্ষণ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এই দিনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা এবং বাঙালি জনগণ সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ঐতিহাসিক সমন্বিত অভিযান আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। স্বশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষের অতুলনীয় ত্যাগের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।’
মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অভিযানগুলোর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে সাংগঠনিক রূপ দিতে যুদ্ধরত সব বাহিনীকে “বাংলাদেশ ফোর্সেস” নামে একীভূত করা হয়েছিল এবং সমগ্র দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। তৎকালীন পাকিস্তান নৌবাহিনীতে কর্মরত বাংলাদেশি সাবমেরিনার ও নাবিকদের সমন্বয়ে গঠিত নৌ কমান্ডো দল ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে দুঃসাহসী অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন নদীবন্দরে খাদ্য ও রসদবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত “কিলোফ্লাইট” চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সফল হামলা চালায়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব দুঃসাহসী অভিযান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।’
প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেওয়া শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। একই সঙ্গে তিনি ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদেরও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি তরুণ সমাজকে মেধাভিত্তিক সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে দেশ গঠনে অবদান রাখতে সক্ষম করার আহ্বান জানান।
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, ‘জুলাই ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, আহত ও জীবিত ছাত্র-জনতার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন, যেন তাঁদের দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
অনুষ্ঠানে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারবর্গের প্রতি আনুষ্ঠানিক সম্মান প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়ায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রতি তিনি ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।