বিগত স্বৈরশাসন আমলে এ কারণে প্রথম আলোর ওপর সরকার ও বিরোধী পক্ষ—উভয় দিক থেকেই প্রত্যাশার চাপ ছিল মারাত্মক। প্রথম আলো যদি কোনো দলীয় রাজনৈতিক মুখপত্র হতো, তাহলে তার জন্য পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না।
কিন্তু দিন শেষে প্রথম আলো একটি মূলধারার বাণিজ্যিক সংবাদপত্র। তাকে টিকে থাকতে হলে বিভিন্ন ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে আপসও করতে হয়। নানা ধরনের পরস্পরবিরোধী বয়ান ছাপাতে হয়, ফলে বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন সময় ক্ষুব্ধ হয়। যেমন বিগত স্বৈরশাসন আমলে আমরা দেখেছি, প্রথম আলো পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির সংবাদ ছাপালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষুব্ধ হয়েছে, আবার পদ্মা সেতুর উন্নয়ন নিয়ে অতি উচ্ছ্বাস প্রকাশিত হলে সরকারবিরোধীরা বিরক্ত হয়েছে।
আমরা সে সময় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে সরাসরি বিষোদ্গার করতে দেখেছি, দেখেছি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে করপোরেট কোম্পানির বিজ্ঞাপন পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রথম আলোর সাংবাদিকদের জেল খাটতে হয়েছে, সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে মামলা হয়েছে ৫৫টি। এসবের কারণ হলো প্রথম আলোর শক্তিশালী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও তার বিশ্বাসযোগ্যতা।
হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, অ্যাননটেক্স থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় মেঘনার বালু লুণ্ঠন বা জমি দখলের মতো ঘটনাবিষয়ক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রথম আলোয় ছাপা হওয়ার কারণে হাসিনা সরকারের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়গুলো দেশে–বিদেশে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে। নির্বাচন নিয়ে অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়টিও তা–ই।
২০১৪ সালের ৬ জানুয়ারিতে প্রথম আলোর সংবাদ শিরোনাম ছিল: ‘জাল ভোট, কলঙ্কিত নির্বাচন’। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের সংবাদ: ‘একচেটিয়া ভোট, নৌকার জয়’ এবং ‘নিয়ন্ত্রিত মাঠ, অনিয়ম, অসংগতি’।